প্রতি বছর বাংলাদেশে এক লাখ পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। কিন্তু সীমিত স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ও সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয়ের অভাবে বহু মানুষ চিকিৎসার সুযোগ পান না। অসংখ্য পরিবারের জন্য ক্যান্সার কেবল একটি রোগ নয় বরং এটি একটি সংকট আর সংগ্রামের নাম। ক্যান্সার আক্রান্ত অনেক পরিবারের এই সংগ্রামে আশার আলো হয়ে দাঁড়িয়েছে কমিউনিটি-নির্ভর একটি উদ্যোগ-ব্যানক্যাট (বাংলাদেশ ক্যান্সার এইড ট্রাস্ট)।
গত মাসেই, ব্যানক্যাট এর নির্বাহী পরিচালক নাজমুস আহমেদ আলবাব বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে লন্ডনের কমিউনিটি এমনকি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট পর্যন্ত এই মহৎ উদ্যোগকে পৌঁছে দেয়। উদ্দেশ্য ছিল সহানুভূতি না চেয়ে সহযোগিতা, সংহতি ও অনুদানের সংস্থান করা—যা দেশের ক্যান্সার চিকিৎসার ভবিষ্যৎ পাল্টে দিতে পারে।
লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেলে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে দেশের প্রথম “ক্যান্সার কেয়ার ভিলেজ” গড়ার পরিকল্পনার কথা পরিবেশন করা হয়। এটি হবে একটি পূর্ণাঙ্গ নিরাময় কমিউনিটি, যেখানে রোগী ও পরিবারের সার্বিক চাহিদা মেটানো হবে। শুধু চিকিৎসা নয়—আবাসন, পুষ্টি, কাউন্সেলিং, সেবাদাতা প্রশিক্ষণ, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, গবেষণা কেন্দ্র এবং চিকিৎসাধীন যত্নের ব্যবস্থাও থাকবে। লক্ষ্য একটাই—চিকিৎসার পাশাপাশি মর্যাদা ও আশা ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশি প্রবাসীরা এই উদ্যোগের প্রতি সাড়া দিয়ে গড়ে তোলেন ফ্রেন্ডস অব ব্যানক্যাট ইউকে, যারা সচেতনতা বৃদ্ধি, অনুদান সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারে কাজ করবে। সম্প্রতি, যুক্তরাজ্যের হ্যাম্পশায়ারের ফ্লিট শহরে আয়োজিত হয় এক সুধী সমাবেশ। এতে অংশ নেন প্রবাসী বাংলাদেশি ও শুভানুধ্যায়ী অনেকে। অনুষ্ঠানের টেবিল সাজানো ছিল ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী এবং তাদের সেবাদানকারীদের তৈরি হস্তশিল্প দিয়ে। এই প্রকল্পের নাম আলোক কাথা, যার বিক্রির আয় সরাসরি ব্যয় হয় বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীদের সহায়তায়।
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ঐতিহাসিক আয়োজন
পরবর্তীতে ব্যারোনেস মানজিলা উদ্দিনের আয়োজনে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসে অনুষ্ঠিত হয় “বাংলাদেশে ক্যান্সার সেবার ভবিষ্যৎ” শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক। প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীদের সংকট তুলে ধরা হয়। আলোচনায় জোর দেওয়া হয়—বাংলাদেশের ক্যান্সার চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, দক্ষতা উন্নয়ন ও জ্ঞান-বিনিময় জরুরি। এই যাত্রার দুটি মূল লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়: বাংলাদেশি ক্যান্সার রোগীদের কণ্ঠ আন্তর্জাতিক পরিসরে, বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে তোলা এবং যুক্তরাজ্যে স্থায়ীভাবে সহযোগীদের নেটওয়ার্ক তৈরি করা।
প্রেস গ্যাদারিং থেকে প্রবাসী সমাবেশ এবং ওয়েস্টমিনস্টারের অন্দরমহল—সব জায়গায় একই বার্তা প্রতিধ্বনিত হয়েছে: বাংলাদেশের ক্যান্সার রোগীরা প্রাপ্য সময়োপযোগী, সাশ্রয়ী ও মানবিক চিকিৎসা। প্রয়োজন দয়া নয়, অংশীদারিত্ব। অনুষ্ঠানগুলোতে উপস্থিত ছিলেন ব্যারোনেস মানজিলা উদ্দিন (সদস্য, যুক্তরাজ্যের হাউস অব লর্ডস), ব্যানক্যাট সভাপতি এ. ফারজাদ আহমেদ, ইউকেবিসিসিআই পরিচালক ও রাজনৈতিক উপদেষ্টা রোহেমা মিয়া এবং ফ্রেন্ডস অব ব্যানক্যাট ইউকের কনভেনর মোকসুদ আহমেদ খান। “আমরা একসাথে হতাশাকে আশায় রূপ দিতে পারি। বিশ্বসংহতির মাধ্যমে বাংলাদেশের ক্যান্সার লড়াই হতে পারে মর্যাদা ও সাহসের গল্প।”- এই ছিল এই যাত্রার মূলমন্ত্র।
যুক্তরাজ্যে ব্যানক্যাটের এ যাত্রা কেবল শুরু। এটি কেবল অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নয়, বরং এক আন্দোলন—যা দুই জাতিকে যুক্ত করছে এক প্রতিশ্রুতিতে: ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের সংগ্রামকে ঘিরে গড়ে তোলা সহমর্মিতা, যত্ন ও মর্যাদার বলয়।